+(880)-01710701915 (OFFICE) c1713@nu.ac.bd
কলেজের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
সিলেট জেলাধীন খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত দারিদ্রক্লিষ্ট ও শিক্ষাক্ষেত্রে অনগ্রসর একটি জনপদ হলো কানাইঘাট উপজেলা। উচ্চ শিক্ষার দ্বার উন্মোক্ত করার জন্য একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা এ এলাকার মানুষের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন ছিল। কিন্তু সক্রিয় উদ্যোগের অভাবে স্বাধীনতা উত্তর দুই দশক কালেও কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। অবশেষে ১৯৯০ ইং সনে কানাইঘাট ছাত্র কল্যাণ পরিষদ –এবং শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সংঘ, কানাইঘাটে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ উদ্যোগের ফলশ্রুতিতে অবশেষে ঢাকায় অবস্থানরত কানাইঘাটের সর্বস্তরের বিদ্যানুরাগী ব্যক্তিবর্গ ১৯৯০ইং সনের ১৫ই মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জনাব ডঃ জালালুর রহমানের বাসায় কলেজ স্থাপনের উদ্দেশ্যে মিলিত হন। ঐ সভার আয়োজক বৃন্দ ছিলেন তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বর্তমান যুগ্ম সচিব জনাব এহসান-ই-এলাহী, বর্তমানে কানাইঘাট কলেজের উপাধ্যক্ষ জনাব লুকমান হোসেইন, চিত্র শিল্পী ভানু লাল দাস, গাছবাড়ী কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ জনাব আব্দুল মতিন সহ অনেকেই। উক্ত সভায় বিশদ আলোচনার পর ১৯৯০ইং সনের ৩০মে কানাইঘাট উপজেলা সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক গণ সমাবেশে কানাইঘাট কলেজ আনুষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। উক্ত সভায় কলেজ বাস্তবায়নের জন্য জনাব আব্দুল কাহির চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে ৬১ সদস্য বিশিষ্ট “কলেজ বাস্তবায়ন কমিটি” গঠন করা হয় এবং উপজেলা পরিষদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে তৎকালীন বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে কলেজের কার্যক্রম আরম্ভ হয়। পরবর্তীতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কর্তৃক বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রটি কানাইঘাট কলেজের নামে বরাদ্ধ প্রদান করা হয়।
কলেজ বাস্তবায়ন পরিষদের সভায় সর্বস্তরের জনতার সর্বসম্মত প্রস্তাবের ভিত্তিতে জনাব সিরাজুল ইসলাম কানাইঘাট কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে কলেজের দায়িত্বভার গ্রহণ করেণ।তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অল্প সময়ে ২০০১ সালের মধ্যে ১৮টি বিষয়ে পাঠদান অনুমোদনসহ বি. এ, বি. এস. এস, বি, এসসি. ও বি, বি, এস (পাস) কোর্সের অধিভুক্তি লাভ করে বৃহত্তর সিলেটের বেসরকারি কলেজের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ ডিগ্রী কলেজ হিসেবে কানাইঘাট কলেজ আত্ম প্রকাশ করে। উল্লেখ্য যে, জনাব সিরাজুল ইসলাম অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে (প্রতিষ্ঠালগ্নে) তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে শিক্ষক/কমর্চারীর বেতন বাবত বিশাল অঙ্কের টাকা অনুদান দেয়ায় তিনি কলেজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে স্বীকৃতি পান।
জনাব আব্দুল কাহির চৌধুরী প্রতিষ্ঠালগ্নে ২,১০,০০০/= টাকা কলেজে এককালীন অনুদান দিয়ে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হন। তাছাড়া স্থানীয় দুর্লভপুর গ্রামের জনাব হাজি জমশেদ আলী এবং হবিবুর রহমান, নয়াখলা গ্রামের বাবু সুদীপ্ত কুমার রায়, মহেষপুর গ্রামের জনাব আব্দুল হামিদ, নন্দিরাই গ্রামের ইঞ্জিনিয়ার জনাব আব্দুল মালিক প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে জমি দান করে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেন। প্রতিষ্ঠাকালীন ১৯৯০ইং সনে তৎকালীন সংসদ সদস্য ব্রিগেঃ (অবঃ) জনাব মাহমুদুর রহমান মজুমদার, সাবেক রাষ্ট্রপতি হোসেন মোহাম্মদ এরশাদ-এর অনুদান হতে ২,৫০,০০০/= টাকা কলেজকে দান করেন।
দাতা জনাব মনোয়ার আলী পরিচালক, দি সিটি ব্যাংক লিঃ ৫০,০০০/= টাকা, প্রবাসী জনাব আব্দুল মুমিন চৌধুরী ২৫০০০/- টাকা, মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব হাফিজ আহমদ মজুমদার ও তাঁর সহধর্মীনী মিসেস হাফছা মজুমদার উভয়ই ৫০,০০০/= টাকা করে মোট ১০০০০০/- টাকা, জনাব নিজাম উদ্দিন আল মিজান ৫৫০০০/= টাকা দান করে আজীবন দাতা সদস্য পদ লাভ করেন। তাছাড়া ধর্মপুর নিবাসী জনাব মোস্তফা কামাল ৭৫,০০০/- টাকার জমি দান করে দাতা সদস্যপদ অর্জন করেন।
কানাইঘাট কলেজ ১৯৯১-১৯৯২ শিক্ষাবর্ষ হতে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা একাডেমিক স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৯৬-১৯৯৭ শিক্ষাবর্ষ হতে উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান শাখা স্বীকৃতি পায়। তাছাড়া ১৯৯৭-১৯৯৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে ডিগ্রি(পাস) বি.এ, বি.বি.এস; ২০০১-২০০২ শিক্ষাবর্ষ থেকে বি.এস.সি (পাস) শাখা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত হয়ে কলেজটি পূর্ণাঙ্গ ডিগ্রি কলেজে রূপান্তরিত হয়।
কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শাখায় ১৮টি বিষয় এবং ডিগ্রি পাস কোর্সে ১৪টি বিষয়ে পাঠদান করা হয়। ১৯৯৩ইং থেকে কলেজটিতে এইচ.এস.সি পরীক্ষা কেন্দ্র এবং ১৯৯৯ইং থেকে ডিগ্রি (পাস) পরীক্ষা কেন্দ্র চালু হয়। কলেজের পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল সন্তোষজনক। পরীক্ষার্থীর পাশের হার সবদাই বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের হারের উপরে থাকে। ১৯৯৭ ইং সালের এইচ.এস.সি পরীক্ষায় একজন ছাত্র মেধা তালিকায় স্থান পায়। ২০০৬ সালের বি.এস.সি(পাস) পরীক্ষায় একজন ছাত্র ১ম বিভাগ ও ২০০৮ সালের ডিগ্রি পাস পরীক্ষায় একজন ছাত্রী ১ম বিভাগ লাভ করে।
প্রায় ৩.২৬ একর জমি নিয়ে কানাইঘাট ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠিত। সরকারের ফ্যাসিলিটিজ ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক নির্মিত তিনটি দ্বিতল ভবনে কলেজের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বর্তমানে ৩৬ জন শিক্ষক ও ১১ জন কর্মচারী কলেজে কর্মরত আছেন।
কানাইঘাট উপজেলার উচ্চ শিক্ষা বিস্তারে বিশেষতঃ নারী শিক্ষার প্রসারে কলেজটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে অর্ধাংশই মহিলা। ক্লাশে উপস্থিতি ও পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে মেয়েরাই অগ্রগামী।
কানাইঘাট কলেজে ক্লাশ রুমের অপর্যাপ্ততা, একটি অডিটরিয়াম ও খেলার মাঠ উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। মাননীয় সংসদ সদস্যের সক্রিয় উদ্যোগ ও প্রচেষ্ঠায় অচীরেই এসব সমস্যার সমাধান হবে মর্মে আশাবাদী।